আমার একটা তুমি চাই
মমতা পাল
আমার একটা তুমি থাকলে অহর্নিশ ছুঁয়ে রাখতাম তাকে।
আর সেই তুমি এলেই ভালোবাসি শব্দটার পিছনে নষ্ট করতামনা দীর্ঘ রাত,প্রেমের পিছনে দীর্ঘ সময়।
আয়নায় ফলিত স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে দেখতাম তোমায়।
তুমি এলেই ঘর হতো--
আর ঘর হলেই আমার ছন্নছাড়া জীবনটা যেত পাল্টে।
রাতারাতি একজন গৃহস্থ হয়ে যেতাম।
আমার বুকের মধ্যে মস্ত বড় একটা ফসলী মাঠ ফুলে ফুলে উঠত ভরে।
তুমি এলেই বেমালুম ভুলে যেতাম সমস্ত যন্ত্রণা, সমস্ত দুঃখবোধ।
সন্ধ্যা হলেই সাঁঝের পাখির মত বাড়ি ফিরতাম।
নিদ্রাহীন কাটতনা সারাটি রাত।
ঝরে পড়তনা বিরহের গীত।
তুমি এলেই অগোছালো জীবনটা হত পরিপাটি
চিরতরে বন্ধ হতো আরশোলা, মশা মাছির উপদ্রব
এলোমেলো থাকতনা কোন আসবাবপত্র।
পরিপাটি থাকত চেয়ার টেবিল,কবিতার খাতা আরও কত কি।
তুমি এলেই বারান্দার ফুরফুরে বাতাসে উড়ত আমার রঙচঙে ফ্লাইং শার্ট,
বাতাসে উড়তনা আমার ব্যাকুল চুল।
তুমি এলেই তোমার গন্ধে আমি ছুঁড়ে দিতাম সেন্টের শিশি,আতর,সুগন্ধি পাউডার।
সোনার হাতে বাজত সোনার কাঁকন
ভুলে যেতাম রেকর্ড প্লেয়ারে বাজানো শ্যামা সংগীত কিংবা রবীন্দ্রনাথের গান।
তুমি এলেই কিনে আনতাম জীবননান্দ দাসের বনলতা সেন,রবী ঠাকুরের শেষের কবিতা।
দু'চোখ ভরে দেখতাম আমার লাবণ্যকে।
দ্বিধাভরা ঠোঁট, একটি কৃষ্ণতিল, মায়াবি আঁখি।
তুমি এলেই বাবা আর করতনা শাসন।
বলতনা "তোর মত বাউন্ডুলে ছেলে কি কোথাও আছে নাকি"?
মা ভাতের থালা নিয়ে রাত অব্দি বসে থাক তনা।
ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখটি মেলে বলতনা "আর কত জ্বালাবি আমায়,এবার সংসারী হ।"
ভুলো ভালা মনটা মুহূর্তেই সব মনে করতে পারত।
তুমি এলেই তোমার ভালোবাসার রাজ্যে চলত শুধুই তোমারই শাসন।
তখন নিঃসঙ্গ কবি থেকে রাতারাতি হয়ে উঠতাম একজন সত্যিকরের পুরুষ মানুষ।
যে সত্যিকারের ভালোবাসা ও ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত।