মিনিষ্টার হবার অল্প একটু বাকি ছিলো....
শাহ সাবরিনা মোয়াজ্জেম
শহরে যাবো কিছু টেস্ট করাতে। বয়স বেড়েছে তাই শরীরের যন্ত্রাংশ ঠিক মতো কাজ করছেনা। টাকাও গুনা টাকা। পরিক্ষা নিরিক্ষা কতো নেয় তাতো জানা নেই। হেঁটে এক কিলো গেলাম। হাত বাড়িয়ে ইশারা করে শেয়ার করা সিএনজিতে উঠেই দেখি পাতলা মতো দুটো লোক পেছনে আর সামনে বসা একজন। মনে মনে ভাবলাম যাক বাঁচা গেলো অন্তত চাপাচাপি হবেনা।
কিছুদূর যাওয়ার পর বিশাল জ্যাম। থুতনিতে ঝোলানো দাঁড়িতে হাত রেখে পায়ের উপর পা দিয়ে মুখটা খানিক হা করে লোকটি ঘুমাচ্ছে। একটা মাছি ভন ভন করছে। পাশের লোকটি মাছি মারার তালে ব্যস্ত। আমি মনে মনে বলি, এই ভর দুপুরে যাচ্ছি তারা তো আবার ছিনতাইকারী নয়!
উঠে যখন পরেছি কি আর করা। কিন্তু ঘুম পাচ্ছে। হাই তুলছি বার বার। ওরা কি ক্লোরফোর্ম স্প্রে করলো নাকি? আর পাশের বেটা ঠাস ঠাস করে মাছি মারায় ব্যস্ত। আমি বললাম, এভাবে মাছি আপনি মারতে পারবেন না। কারণ মাছির মাথায় অগুনিত চোখ! কে শুনে কার কথা। এক সময় নিজ থেকে ক্ষ্যান্ত হলেন।
আমি মিছিলের আগে আগে, কারণ আমি প্রার্থী। আমাকে নিয়ে উৎসুক জনতার ভীষণ ভীড়। আমার গলায় কোরবানি হাটের বেঁচে দেয়া গরুর মালা তাতে রাংতা লাগানো। আমিও তাদের তালে নেচে যাচ্ছি। মিনিষ্টার হওয়ার শখ আমার ইদানীং কালে দেখা দিয়েছে। আগে অবশ্য ক্যানভাসার হওয়ার শখ ছিলো! ক্যানভাসার হওয়ার সকল যোগ্যতা থাকার পরও কি কারণে হলাম না তা আজ আর মনে নেই।
হা, আরেকটা ইচ্ছে ছিলো উকিল হওয়ার। কারণ উকিল হলে নাকি রাজনৈতিক হওয়া যায়। আর রাজনীতি মানেই এমপি মন্ত্রি। কিন্তু আহলাদের স্বামীর জন্যে হয়নি। কাঁচা প্রেম পাকা বিয়ে তারপর দেশের মাটি খাঁটি করতে সোনালী ফসল সন্তান। এবার সন্তান মানুষ করার কৌশল শিখে কসরত করে সন্তান মানুষ করো অর্থাৎ পেনাল্টিতে কিক করে আমাকে স্বামী আউট করে দিলো! তখন পোলাপানের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে সব ভুলে গেলাম। তাই ইদানীং খুব সখ মন্ত্রী হবার!
গরুর মালা পরে আমি নিজেকে মন্ত্রী ভাবা শুরু করে দিয়েছি, সভা সমাবেশ আর মিছিল মিটিং আর কাঁচা পাকা ওয়াদা দিয়ে দ্বারে দ্বারে ভোট চাইছি। ভোটের একমাস আমি ঘুমাইনি। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে মাঠে নামছি,ডায়বেটিস একুশ ছিলো হাঁটার চাপে ডায়বেটিস আর সুবিধে করতে পারলোনা "ছেড়ে দে মা পালিয়ে বাঁচি!" বলে বিদায় নিলো!
সকাল বিকাল সকল রকম মানুষের সাথে একাত্বা ঘোষণা করছি। সকল ভেদাভেদ ভুলে আমি তখন খাঁটি মানুষ। কখনো গাইছি, " মানুষ মানুষের জন্য। " এই সুযোগে গলাটা ঝালিয়ে নিচ্ছি। মহা সমরোহে ফুটবল উদ্ভোদন করতে গিয়ে ফুট এগিয়ে দিতেই বল গড়িয়ে পরার আগেই আমি ই পিছলে ভাঙ্গা কোমড় নিয়ে মাটিতে পরে গেলাম। বিরানব্বই কেজী "আমি"কে তুলতে ক্রেন না লাগলেও বিপুল জনতা লেগেছিলো!
অবশেষে ভোটে আমি পাশ করেছি। পাবলিক ডিকলার হয়ে যাচ্ছিলো যখন, হাজার হাজার নেতা কর্মি আমায় ফুলের মালায় বরণ করতে যাবে আমি তখন উত্তেজনায় কাঁপছি! 😙"এই আফা উডুইন, আফনি দেখি বাক্কা ঘুমাইতেছেন। নামতাইন না? 😙
উঠে দেখি কয়েক স্টেশন পার হয়ে আমি শহরের বাইরে। বে-রসিক ড্রাইভার আমায় জয়ের মালা পরতে দেয়নি। পেনাল্টিতে ড্রাইভার আমায় কিক দিয়ে চার রাস্তার মোড় ফেলে চলে গেলো!!!