কোন এক সানডে'তে, এক পাবলিক বাসে যাত্রী হয়ে উঠেছিলাম। আমার সিটের সামনে ফাঁকা স্থানটিতে, হুইল চেয়ারে বসেছিল এক বয়স্ক ভদ্রলোক। আমি ভিষন অবাক হয়েছিলাম, যখন পাবলিক বাসের ড্রাইভারকে, নিজে চালকের আসন থেকে নেমে, প্লাটফর্ম সেট করে হুইল চেয়ারে বসা সেই ভদ্রলোক'কে বাসস্টপে নামিয়ে দিতে দেখেছিলাম।
আমার জীবনের প্রথম এমন ঘটনা দেখে নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস হচ্ছিলনা। তবে যখন আমাদের সবাইকে বসিয়ে রেখে, বাস চালক নিজে নেমে, হুইল চেয়ার ঠেলে, তার যাত্রীকে সসম্মানে যত্ন এবং আন্তরিকতার সাথে বাসস্টপে ছেড়ে দিল, তা দেখে আমার বুকের ভিতরটাতে এক অন্যরকম ভাললাগা এবং মুগ্ধতা কাজ করছিল। সেদিন ঠিক কতটা অবাক হয়েছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা।
আমি যে দিন প্রথম এ দেশের এ্যম্বুলেন্সের মাধ্যমে হাসপাতালে গিয়েছিলাম, করোনার ভয়াবহতার মাঝেও এ্যম্বুলেন্সে থাকা চারজন মেডিকেল কর্মির আন্তরিকতা দেখে আমার চোখের কোণা ভিজে গিয়েছিল। আরও বেশি অবাক হয়েছিলাম হাসপাতালে পৌছানোর পর, ডাক্তার এবং নার্সদের ব্যবহার দেখে, ক্ষানিকের জন্যে নিজেকে মনে হচ্ছিল যেনো, আমি বড় মাপের কোন VIP.
মানুষকে তারা, শুধু মানুষই ভাবে, অন্য কিছু নয়। কে শ্রমিক, আর কে মালিক তার ভেদাবেদ হয়তো করতে শিখেনি তারা। মানুষের মূল্যায়ন এবং সম্মান, যথাযথ ভাবেই দিতে জানে তারা।
একজন রোগির সাথে একজন ডাক্তার যখন আন্তরিকতা নিয়ে কথা বলে, ডাক্তারের ব্যবহারেই হয়তো রোগি অর্ধেক সুস্থতা বোধ করেন।
নৈতিকথা, মানবিকতা এবং আন্তরিকতা এই শিক্ষাগুলো ছোট্ট থেকেই যারা পেয়েছে পারিবারিক ভাবে। একমাত্র তাদের দ্বারাই এমনটা সম্ভব। আর তারা পেশাগত বাধ্যবাধকতা থেকে নয়, আন্তরিকতা থেকেই এমনটা করে থাকে। যা আমরা অনেকেই পারিনা বা করিনা।
#প্রবাসীর_গল্প,
সুমন সিকদার,
সিঙ্গাপুর প্রবাসী।