ADS

সিঙ্গাপুর ইমিগ্রেশনে একদিন

সিঙ্গাপুর ইমিগ্রেশনে একদিন 

দুই দিনের ভ্রমন শেষে মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে ফিরছি। যদিও সিঙ্গাপুর আর মালয়েশিয়া পাশাপাশি দেশ বাস ভ্রমনে এক থেকে দেড় ঘন্টায় মালয়েশিয়া পৌঁছানো যায় তবুও ভিন্ন দেশ ভিন্ন আবহাওয়া অন্যরকম ভালোলাগা অনুভূতি নিয়ে আমার কর্মক্ষেত্র সিঙ্গাপুর ফিরছি। 

সিঙ্গাপুর ইমিগ্রেশনে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আমি ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে দৌঁড় দেবার প্রস্তুত নিচ্ছি। কারন একটু দেরী করলেই বাস আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।আর একবার বাস মিস করলে কতক্ষণ পর দ্বিতীয় বাস আসবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।দৌঁড় দিতে যাব ঠিক এমনসময় সিভিল পোশাকে একজন ইমিগ্রেশনে কর্মরত একজন নিরাপত্তা কর্মী এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, আপনি কি ওমর ফারুক? তার প্রশ্ন শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম। এই ইমিগ্রেশন বিমানবন্দর না হলেও এখানে বিমানবন্দরের মতই নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ইমিগ্রেশনের মত একটি জনবহুল জায়গায় অচেনা একটা লোক যদি এসে কারো নাম ধরে সম্বোধন করে তাহলে ঘাবড়ে যাবার মতই অবস্থা হয়।

আমি লোকটির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে মনে মনে ভাবলাম কোথা থেকে এলো এই লোক! কিন্তু মুখে কিছু বললাম না।মনের কথা মনেই রয়ে গেল।আমি মুখে কৃত্রিম হাসি হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে বললাম, জ্বি আমিই ওমর ফারুক কিছু কি বলবেন?লোকটি মোলায়েম কন্ঠে বলল, আপনাকে একটু আমার সাথে আসতে হবে স্যার। তার কথা বলার মাঝে কি যেন লুকিয়ে ছিল। আমি না করতে পারলাম না। 

আমি তার পিছু পিছু একটি কক্ষে প্রবেশ করলাম।সেখানে একজন অফিসার গম্ভীরমুখে বসে আছেন।আমাকে দেখে একটু নড়েচড়ে বসলেন।তিনি আমার পাসপোর্টটা হাতে নিয়ে পাতা উলটে দেখতে দেখতে বললেন,মালয়েশিয়া কেন গিয়েছিলেন? বলতে চেয়েছিলাম ভাল্লাগে, ঘুরতে, ঠেলায়,আনন্দে। কিন্তু মনের কথা চেপে রেখে বললাম, বেড়াতে গিয়েছিলাম। 

আমার সাথে কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর তিনি আমার দিকে মুগ্ধভাবে তাকিয়ে বললেন, ওয়াও তুমি তো খুব ভালো ইংরেজি জানো। মনে হয় তুমি উচ্চ শিক্ষিত। আমি তার কথা শুনে আনন্দে গদগদ করতে লাগলাম। অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে। তিনি তার সামনে একটি চেয়ার দেখিয়ে বললেন, এখানে বসুন। আমি চেয়ারটি টেনে তার মুখোমুখি হয়ে বসলাম।

অফিসারটি পাশের একটি চেয়ার দেখিয়ে বললেন, তাকে চিনেন? আমি তাকিয়ে দেখি আমার সহযাত্রী আমার রুমমেট জুবুথুবু হয়ে বসে আছে।তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে অপরাধী। দু'জন একই সাথে ছিলাম তাকে কখন এখানে নিয়ে এসেছে? আশ্চর্য এতক্ষণ তার কথা আমার মনেই ছিল না। মানুষের মস্তিষ্কে যখন গভীর মনোযোগ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জিনিসকে ফোকাস করে তখন আশেপাশে কিছু ঘটে গেলও তা মস্তিষ্কে তার প্রভাব পড়ে না।

আমি অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললাম,হ্যাঁ চিনি। আমার বন্ধু আমরা একই সাথে গিয়েছিলাম। আমার বুঝতে বাকি রইল না আমাকে কেন এখানে নিয়ে এসেছে। আমার বন্ধুকে হয়ত কিছু জিজ্ঞেস করা হয়েছিল সে সঠিক জবাব না দিয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিল। তাই নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে সন্দেহ করে এখানে নিয়ে এসেছে। সে হয়ত সহযাত্রী হিসেবে আমাকে দেখিয়ে দিয়েছিল।তাই তারা আমাকে এখানে ধরে নিয়ে এসেছে। 

তবে আমি খুব উপভোগ করছি ব্যাপারটা। জীবনে প্রথম ইমিগ্রেশনে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। বিভিন্ন সিনেমায় দেখেছি কত ব্যক্তিদের ইমিগ্রেশনে কিভাবে চেক করা হয়।সেই জন্য আমি নিজের পোশাক খোলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়েই আছি।

ঠিক সে সময় আমার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসল। অফিসারটি আমার কাছ থেকে মোবাইলটা চেয়ে নিয়ে বললেন, ফেসবুকে লগইন করে দেন।আমি ফেসবুক লগইন করে তার দিকে এগিয়ে দিলাম। তিনি আমার টাইমলাইনে কিছুক্ষণ দেখে মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বললেন, ও আপনি লেখক। আমি বললাম, না আমি লেখক নই। আগে প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনা ডায়েরিতে লিখতাম আর এখন ফেসবুকে লিখি।তিনি বললেন বাহ্ খুব সুন্দর। অনেক পত্রপত্রিকায় লিখেছেন দেখছি। 

তিনি ডায়েরি নিয়ে আমার ফেসবুক আইডির নাম লিখলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার মোবাইল নাম্বার, ইমেইল দিন। আমার বুঝতে বাকি রইল না এরা এখন থেকে আমার সমস্ত একটিভি মনিটরিং করবে।মনিটরিং করুক তাতে কি আমি তো কোন রাজনৈতিক দলের কিংবা সন্ত্রাসীদের হয়ে লিখি না। আমি ভয় না পেয়ে আমার সব তথ্য দিলাম। লেখা শেষ করে অফিসারটি মোবাইলটি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, লেখক সাহেব আপনার সময় নষ্ট করার জন্য দু:খিত। এটা আমাদের রুটিন জব। আশাকরি বুজতে পেরেছেন। আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম বুঝতে পেরেছি। তিনি তার সহকর্মীকে ডেকে বললেন, উনাদের যেতে দাও উনি একজন লেখক।

স্ব-সম্মানে সেখান থেকে বের হয়ে খুব ভালো লাগল। এই প্রথম টুকটাক লেখালেখির জন্য ইমিগ্রেশন অফিসারের নিকট সম্মান পেলাম। সাথে ভয়ও লাগছে এখন থেকে তারা যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আমার গতিবিধি অনুসরণ করবে। আমার ভয় পাবার কিছু নেই আমি ফেসবুকে মিথ্যা সংবাদ, গুজব ছড়াই না। আমার সহযাত্রী রুমমেট বলল,ওরা আমাকে অনেককিছু জিজ্ঞেস করেছিল আমি ভয়ে জবাব দিতে পারিনি তাই আপনাকে দেখিয়েছিলাম। আমি তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম। তার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে সত্যি সে ভয় পেয়েছিল।

ওমর ফারুকী শিপন। 
সিঙ্গাপুর প্রবাসী৷ 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.