ADS

হুমায়ুনের প্রেম, বিয়ে, সংসার _ আব্দুল্লাহ জিয়াদ


হুমায়ুনের প্রেম, বিয়ে, সংসার
আব্দুল্লাহ জিয়াদ
ষাটের দশকে এসএসসি ও এইচএসসি-তে বোর্ড স্ট্যান করা তরুণ হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৩ সালের শুরুতে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। সে বছরই এক আত্মীয়ের মধ্যস্থতায় বৃটীশ বিরোধী আন্দোলনের পথিকৃত প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ এর নাতনি গুলতেকিন এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী গুলতেকিন বিয়ের পর ঘরকন্না'র কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ১৯৭৬ সালের দিকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সপরিবারে গমন করেন। সেখানে তার চার সন্তানের মধ্যে দুটি জন্ম গ্রহন করে। আশির দশকের শুরুতে তিনি দেশে ফেরেন। তখন দেশে সবে রঙিন টেলিভিশন এর প্রচলন শুরু হয়েছে। হুমায়ুন সন্তানেরা বায়না ধরলেন রঙিন টেলিভিশন এর জন্য। কিন্তু একহাজার টাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরিতে তো তা সম্ভব নয়। তখন বিটিভির প্রযোজক ছিলেন বন্ধু নওয়াজিস আলী খান।তিনি হুমায়ুনকে পরামর্শ দিলেন,বিটিভির জন্য একটা নাটক বানিয়ে দিলে তিনি রঙিন টেলিভিশন এর ব্যবস্থা করবেন।
উল্লেখ্য যে হুমায়ুনের ছাত্র জীবনে লেখা প্রথম উপন্যাস "নন্দিত নরকে" প্রকাশ হয়েছিল ১৯৭২ সালে,যেটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বন্ধুর কথামত তিনি নাটক বানালেন "প্রথম প্রহর" যা বিটিভিতে রেকর্ড পরিমাণ জনপ্রিয়তা পায়।এরপর তিনি উপন্যাস লেখা ও নাটক তৈরিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেন। তার হাত দিয়ে "এই সব দিনরাত্রি", বহুব্রীহি, "কোথাও কেউ নেই" ",অয়োময়" এর মত কিছু কালজয়ী নাটক তৈরি হয়। তার সৃষ্টি কর্ম সবই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় দেখে তিনি এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরিটা ছেড়ে দিয়ে পেশাদার লেখক হিসাবে আত্ম প্রকাশ করেন।
নব্বই এর দশকের মাঝামাঝি সময়,হুমায়ুন আহমেদ নাটক তৈরিতে পুরাপুরি মনোযোগী হয়েছেন,সে সময় পরিচয় হয় স্কুলগার্ল শাওনের সাথে,যে কিনা তার মেজো মেয়ের সমবয়সী, শাওনের মা সে সময় মহিলা এমপি ছিলেন। শাওনের বহুমুখী প্রতিভা দেখে পঞ্চাশোর্ধ হুমায়ুন তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন এবং প্রায় সব নাটকেই তাকে কাস্ট করেন। হুমায়ুন আহমেদ এর একটি অভ্যাস ছিল ; নাটকের স্যুটিং এর জন্য কোথাও গেলে তিনি সবাইকে নিয়ে যেতেন এবং হৈ-হুল্লোড় করে কয়েক দিন কাটাতেন।
একদিন মধ্য রাতে তিনি দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া শাওনকে ডাকলেন, বললেন ; " অন্ধকার গুহায় শিল্পী যখন ছবি আঁকে তখন প্রদীপটি ধরার জন্য একজন লোকের প্রয়োজন হয়,তুমি কী সেই প্রদীপটি ধরবে"? তারপর কয়েকদিন শাওন কোন কথা বলেননি। এর এক সপ্তাহ পর পুনরায় হুমায়ুন বললেন ; "যদি আমি কয়েকদিনের জন্য সেন্টমার্টিনের নির্জনতায় বেড়াতে যাই তুমি কী সঙ্গী হবে"? এবার শাওন আর বিলম্ব করলেন না,বললেন; আমি রাজি!
এরপর এই জুটির অসম প্রেমে জোয়ার উঠে। প্রেমের ইতিহাসটা তারা নতুনভাবে রচনা করে। হুমায়ুন পাগল মানুষের মুখে মুখে প্রেমগাঁথা ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য হুমায়ুন শাওনের সাথে অবসর কাটানোর জন্য সেন্টমার্টিনে স্বপ্নবিলাস নামে একটি বাড়ি নির্মান করেছিলেন।
কিন্তু এতে বাঁধ সাধে স্ত্রী গুলতেকিন, তিনি এই প্রেম মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এমন কী ঘোষণা দেন শাওনকে বিয়ে করতে হলে তাকে ডিভোর্স দিতে হবে। হুমায়ুন তাই করলেন, ২০০৩ সালে গুলতেকিন কে ডিভোর্স দিলেন। ২০০৪ এর ১২ ডিসেম্বর শাওনকে বিয়ে করে আলাদা বাড়িতে উঠলেন। মাত্র ৭ বছরের দাম্পত্য জীবনে এই জুটির তিনটি সন্তান জন্ম নেয়। প্রথমটি মেয়ে মারা যায়। ছেলে নিনিদ ও নিষাদকে নিয়ে এখন শাওনের সংসার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে তার প্রিয় বাদল ঝড়া দিনে বাংলা সাহিত্যের এই মহান কারিগর কোলন ক্যান্সারে মারা যান।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.