নিশাতের বিয়ে ভেঙে গেলো
নিশাতের বিয়ে অবশেষে ভেঙে গেলো। বিয়ে বাড়ির আলোকসজ্জা , খাবারের আয়োজন, হল ভাড়া সবই পড়ে রইলো শুধু বিয়েটা ভেঙে গেলো। লোকজন কত সমালোচনা করেই চলেছে আর নিশাতের বড় লোক আদর্শবান বাবা মাথা হেট করে বসে আছেন।
নিশাত বিবিএ ফাইন্যাল ইয়ারে পড়ুয়া, বুয়েট হতে পাশ করা ছেলে তৌহিদ ইটালীর একটা নামী কোম্পানীতে কাজ করে। নিশাতের সাথে পারিবারিক ভাবেই আজ বিয়ে ঠিক ছিল ।
বরপক্ষ ফিরে গেল কনেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা শুনে। শিক্ষিত তৌহিদ ভেবে পায়না নিশাতের সাথে কথা বলেই বিয়েটা ঠিক হয়েছিল। ওঁর ব্যক্তিগত পছন্দ থাকলে সে বলেতেই পারত। যদি ও তার বাবা ও অভিভাবকদের চাপে ফিরে যেতে হয়েছে তবু একটা প্রশ্ন তার মনের কোণে উঁকি দিচ্ছিল কেন এমন করল নিশাত?
নিশাতকে পার্লার হতে সোজা বাসায় নিয়ে আসার কারণই ছিল গহনা পরার জন্য । এত দামী গহনা গুলো ঘরে এসে পরবেই সাব্যস্ত হয়। এর পরের ঘটনা আচমকাই ঘটে গেলো। বাসার বেশির ভাগ মেহমান ও সদস্য রা হলে চলে গিয়েছিলেন। একঘন্টা পরে নিশাতকে নিয়ে তার বাবা হলে পৌঁছবেন ঠিক ঐ সময়ে ঘঠলো ঘঠনা।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো, দারোয়ানকে অজ্ঞান করে দিয়ে মাইক্রোবাসে করে আসা মুখোশধারী কিছু লোক বাসায় প্রবেশ করে। নিশাতের বাবা কিছু বোঝার আগেই ছুরি ধরে কালো মুখোশধারী ক্লোজিটের চাবি নিয়ে সব টাকা ব্যাগে ভরে নেয়। নিশাতের বাবা রফিক সাহেব ফোন হাতে নিতেই ওরা কেড়ে নেয় এবং শাসিয়ে দেয় বাড়াবাড়ি না করতে। পাঁচ ছ জনের দলে সবার মুখে কালো মুখোশ পরা, হাতে অস্ত্র ।নিশাতের ভাই বুঝতে পেরে থানায় ফোন করছে শুনে ওরা তাকে অস্ত্র দেখিয়ে বেঁধে ফেলে এবং তাড়াহুড়ো করে চলে যায়।ধকল কাটিয়ে উঠে রফিক সাহেব বললেন যা হবার হয়েছে সবাই চলো হলে দেরী হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিশাতের রুমে তাকে পাওয়া গেলো না। অনেক খোঁজাখুজি করে ও কেউ বুঝতে পারল কি হয়েছে। ফোনটা খাটের ওপরে পড়ে আছে। এ দিকে বিয়ের হল হতে নিশাতের চাচা ফোন করছেন বরপক্ষ চলে এসেছে নিশাত কে নিয়ে যেতে বিয়ে পড়ানো হবে।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় রফিক সাহেবের প্রেসার বেড়ে গেলো! বৃদ্ধ দাদা সহ সবাই মুষড়ে গেলেন কি বলবেন বরপক্ষকে। নিশাতের চাচা থানায় ডায়েরী করলেন, পুলিশ ডাকাত দলের সন্ধান শুরু করে দিয়েছে কিন্তু বিয়েটা ভেঙে গেলো। লোকজন কত বাজে কথা বলছে নিশাত পালিয়ে গেছে ।
ওদিকে নিশাতের জ্ঞান ফিরে দেখতে পেল একটা খাটে সে শুয়ে আছে। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে আর মনে করার চেষ্টা করল কী ঘঠেছিল? অচেনা পরিবেশে সে ঘাবড়ে গেলে ও তার মনে পড়ল ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে গয়নার বাক্স হতে অলংকার পরছিল তখনই বিদ্যুৎ চলে যায় আর মুখোশে ঢাকা কেউ গয়নার বাক্স কেড়ে নেয়। পরক্ষনেই কেউ একটা রুমাল ওঁর নাকে চেপে ধরার আগ পর্যন্ত চিৎকার দিয়েছে সে। এরপর কিছুই মনে নাই।
নিশাত জোরে আওয়াজ দিল , কেউ আছেন? আমি কোথায় এখানে কেন নিয়ে আসা হলো?
একজন মুখোশে ঢাকা লোক এসে বলল কি চাই?
আমাকে কেন নিয়ে এসেছ?
লোকটি বলল, সেটা একটু পরেই বুঝবেন!
বাথরুমে পানি ও কিছু পরিধেয় পোশাক আছে আপনি ফ্রেশ হোন। আমার বস আসলে সব জেনে নিবেন!
ওরা বলল, এখুনি ফোন দিতে পারব না তবে কথা দিচ্ছি আপনাকে পৌছিয়ে দেয়া হবে।
নিশাতের রাগে মাথা গরম হয়ে গেলো। বিয়ের ভারী পোষাকে নিজেরকে কাহিল লাগছিল, অগত্যা বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে কাপড় চেন্জ করল। খুব অস্বস্তি লাগছিল, মনে পড়ল বিয়ের কথা ! তার বাবার কথা!
নিশাত আবার বলল, কেউ আছেন?
ঐ লোকটি এসে বলল খাবার আছে ঐ প্যাকেটে আর পানি খেয়ে নিন।
নিশাত বলল, আমি বাসায় যেতে চাই। আমাকে ছেড়ে দাও।
লোকটি বলল, আপনি খেয়ে নিন , আমাদের বস এখুনি আসছেন।
কিছুক্ষণ পরে দুজন লোক একজনের মুখোশ আরেকজন মুখোবিহীন রুমে ঢুকলো।
মুখোশধারী বলল, ইনার জন্য আপনাকে তুলে আনতে হল!
নিশাত বিস্ফারিত চোখে জিগ্যেস করল, উনি কে আর কেন আমাকে তুলে আনা হল?
অপর লোকটি বলে উঠল মুখোশধারীকে , তোমরা ভুল করেছ এই সে নয়!
মুখোশধারী বলল, আপনার দেওয়া তথ্যমত কাজ করেছি এবার পেমেন্ট দিন।
লোকটি বলল, আমি যাকে তুলে আনতে বলেছি সে এই মেয়ে না । তোমারা ভুল করেছ, আজ ঐ মেয়ের ও বিয়ে হবার কথা ! এতক্ষণে হয়তো বিয়ে হয়ে গেছে।
এত বড় ভুল করলে? তোদের শাস্তি দেবো, তাই পেমেন্ট হবে না।
নিশাতের মাথা চক্কর দিতে লাগল। সে সাহস করে বলল, আমাকে ফোনটা দিন আমার বাবার কাছে ফোন করব!
পাঁচদিন এভাবে থাকার পর মুখোশধারী বলল, পুলিশ পিছু নিয়েছে আজ আপনাকে পৌছে দেয়া হবে।
রফিক সাহেব মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি হলেন তবে ডাকাতকে জেলে দিতে বললেন।
নিশাত বলল, ছি! আপনারা এত খারাপ! একটা মেয়েকে বিয়ের আসর হতে তুলে নিয়ে আসতে লজ্জা করল না? বিবেকে বাঁধল না?
টাকার জন্য এত নীচে নামতে পারেন? অসভ্য জানোয়ারের দল!
মুখোশধারী বলল, এত কথা বলার কি প্রয়োজন ? আপনার ইজ্জতে হামলা হবে না, আজই বাসায় পৌছে দেব। মধ্যরাতে রওয়ানা দেব। অলরেডী দলের দুটো ছেলেকে পুলিশ ধরে ফেলেছে, আমি যে কোন সময় ধরা পড়ব। তার আগে আপনাকে পৌছে দেব কথা দিচ্ছি!
নিশাত বলল, ডাকাতদের আবার সাধু সাজা? ঐ লোক যিনির আদেশে তোমরা আমাকে তুলে আনলে ওঁকে আগে পুলিশে দিতে হবে।
ফোনটা দিন বা আমাকে ছেড়ে দিন আমিই চলে যাব শুধু বলে দিন কোথায় আছি?
মুখোশধারী কিছু না বলে চলে গেলো।
রফিক সাহেবের স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন। আজ উনি বাসায় ফিরলেন আর পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন বলছেন খুব শ্রীঘ্রই ডাকাতের পুরো দল ধরা পড়বে।
মুখোশধারী যখন নিশাতকে নিয়ে গাড়ি করে রফিক সাহেবের বাসার গেটে পৌঁছল তখুনি দারোয়ান নিশাত কে দেখে চিৎকার করে উঠলো .. আপামনি আপনি?
নিশাত দ্রুত বাবার রুমে গেল আর লোকটিকে বলে দিল চলে যাও পালাও এখান থেকে ! আমার বাবা তোকে জানে মেরে ফেলবে।
মুখোশধারী পালাবার আগেই আগে থেকেই পাহারারত পুলিশ তাকে ধরে ফেলল।
মুখোশধারীকে পুলিশ ভ্যানে তোলার আগে সে বলল, আমি রফিক সাহেবের সাথে কথা বলতে চাই,রফিক সাহেব রেগে গেলেন, কিন্তু উনার রাগ সামলে জানতে চাইলেন , তুমি আমার মেয়েকে কেন তুলে নিয়েছিলে? ছেলেটি হাত জোড় করে বলল, আমি অন্যায় করেছি আমাকে ক্ষমা করুন। কি করব আমার বাবা নেই, মায়ের কঠিন অসুখ ক্যান্সার হয়েছে। কলেজ শেষ করে কোন কাজ না পেয়ে এই ডাকাতদের দলে জড়িয়ে যাই! আপনার মেয়েকে তুলে নিতে পারলে মোটা টাকা পাবো। শুধু টাকার জন্য এই কাজ করেছি, আপনার মেয়ে ও আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি হাত জোড় করে। পুলিশ তাকে লাটি দিয়ে বাড়ি দিয়ে বলল, অনেক নাটক হয়েছে এবার শ্বশুর বাড়ী চল! জামাই আদর পাবে। যা বলার কোর্টে বলবে এবার চল বলে টেনে ভ্যানে তুলে দিল। রফিক সাহেব শেষবারের মত অবাক হলেন ! শুধু মাত্র টাকার জন্য আমার মেয়েটার জীবনে কালিমা লেগে গেলো?
Shamsun Fouzia
New York, USA

