ADS

ভুতের আলো _ আব্দুল্লাহ জিয়াদ

 

ভুতের আলো _ আব্দুল্লাহ জিয়াদ

আশির দশকের শেষ দিকের ঘটনা স্থানীয় হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। বিজ্ঞানের ক্লাসে স্যার পড়ালেন ; নিশি রাত্রে কোন বিল বা জলাশয়ের মাঝে তোমরা আলো জ্বলতে দেখেছো? দেখেছি স্যার। ওটা আসলে আলেয়ার আলো। জলাশয়ের তলদেশে মার্স বা মিথেন গ্যাস তৈরি হয়। নিশুতি রাতে চারদিক যখন নিরব নিস্তব্ধ থাকে তখন মিথেন গ্যাস বায়ুর সংস্পর্শে এসে দপ করে জ্বলে উঠে, অনেকে এটাকে ভূতের আলো ভেবে ভুল করে।

ক্লাসের টপ স্টুডেন্ট হিসাবে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার কবরস্থানে আমরা যে ভুতের আলো দেখি সেটা তাহলে কী? স্যার বিরক্ত হয়ে বললো ; আরে বোকার হদ্দ ওটাও মিথেন গ্যাসের খেলা। মৃত লোকের হাড় থেকে ধীরে ধীরে মিথেন গ্যাস রিলিজ হয়, এই গ্যাসের কারণেই নিশুতি রাতে কবরস্থানে আলো জ্বলে।

সেদিন সন্ধ্যায় হোস্টেলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, দেখলাম আমি ছাড়া স্যারের কথা কেউ বিশ্বাস করেনি। একজন আচমকা বলে বসলো ; ভুত যদি নাই থাকে তাহলে অনতি দূরে গড় থেকে ঘুরে আয় দেখি,যদি পারিস সবাই মিলে তোকে পঞ্চাশ টাকা দেবো।

এই গড়ে ১৯৪৩ এর কলেরা মহামারির সময় শতশত লোককে গণকবর দেয়া হয়েছিল। কথিত আছে যে,একদা এক ব্রাহ্মন কন্যা এক মুচির ছেলেকে ভালবেসেছিল,জাত যাওয়ার আশংকায় মেয়েটিকে নির্যাতনের এক পর্যায়ে মারা গেলে তাকে গড়ে দাহ করা হয়। জনশ্রুতি আছে মেয়েটি নিশি রাতে আলো জ্বালিয়ে কান্না করে,কখনো নৃত্য করে,কখনো মিহি সুরে গান গায়। তাই সন্ধ্যার পর সচরাচর সেখানে কেউ যায়না।

আমি সেদিন বন্ধুদের চ্যালেন্জ গ্রহন করেছিলাম, ভরসা শুধু স্যারের মুখের অমিয় বাণী। রাত দশটার পর যখন আমি গড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম; আমাকে শর্ত দেয়া হলো, গড় থেকে জারুল গাছের টাটকা পাতা ছিড়ে আনতে হবে।

আমি যাচ্ছি,কিন্তু আমার একি হাল,প্রতি পদে পদে গায়ের লোমগুলো দাড়িয়ে যাচ্ছে। যখন গড়ের কাছে পৌঁছে গেলাম,দেখলাম সেই মেয়েটির অশরীরী আত্মা নাচছে। আমার তো অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা, শুধু স্যারের "ভুত বলে কিছু নাই" কথাটি বারবার স্মরণ করতে লাগলাম। এতক্ষণে আমার মাথার চুলগুলো পর্যন্ত খাড়া হয়ে গেছে। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। অবশেষে গড়ে পৌঁছে দেখলাম,ওটা কোন মেয়ে নয়,কলাগাছের ডাল ভেঙে বাতাসে নড়ছে। গড়ের মধ্যে খসখস শব্দ পেলাম,ভাবলাম শেয়াল টেয়াল হবে। গাছের মাথায় চি হি শব্দ শুনলাম,ভাবলাম হুতুম পেঁচা হবে। অর্থাৎ প্রচলিত বিশ্বাসের বিপরীতে একটি কিশোর ছেলে প্রতি পদেপদে বিজ্ঞানকে দাড় করিয়ে দিচ্ছে। তারপর অসীম সাহসিকতায় আমি জারুল গাছের পাতা ছিড়লাম,এবং অনেকটা দৌড়ে হোস্টেলে ফিরে এলাম।

জীবনে প্রথমবারের মত আমি টাকা ইনকাম করলাম, বড়োই কষ্টার্জিত টাকা! তারপর থেকেই আমার রাতের সাথে মিতালি। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও আছে এরকম ঘটনা।

যে বিজ্ঞানের ছাত্রের পরীক্ষাটা দিলাম, আজও আমি তাই আছি!!

আব্দুল্লাহ জিয়াদ


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.