গল্প ছলে বুনো (৮৭)
শাহ সাবরিনা মোয়াজ্জেম
( আজ পাঠকের উদ্দেশ্যে বুনোকে নিয়ে কিছু কথা বলছি)
বুনোর অচেনা স্পর্শে
আমি ক্রমশ রমণী হয়ে উঠি ।
হৃদয়ে নাচে শ্রাবনের নর্তকী ।
হৃদয়ের বৃত্ত্যান্তে পড়ে থাকে
এক গুচ্ছ হারানো স্বপ্ন ।
আমার নাবালক স্বপনেরা কখন
সাবালকে রুপান্তরিত হয় বুঝিনি ।
মেঘ, বৃষ্টি, বিদ্যুতের ঝলকানিতে
বুনোর শিহরণ আমার রন্দ্রে রন্দ্রে ।
হৃদয় বাড়ি প্রতিনিয়ত সহেলি হয়ে ওঠে
বুনোর আগমন ও প্রত্যাগমনে ।
কোন নীলাভ বিকেলে কিংবা লাফাঙ্গা রাতে
বুনো এসেছিলো কি দুয়ারে ।
আমি বুনোর দুয়ারে হাতছানি দেই ।
বুনোর অশুভ সঙ্কেত
আমার অজানা ভীত কাঁপিয়ে তোলে ।
চোখ বুঝে আসে বুনো সন্ধ্যায় ।
চোখ মেলে দেখি এক ফালি চাঁদ ।
পত্র পল্লবে পেলব মেলে জড়িয়ে থাকে
পারিজাত রঙের বুনো আকাশ ।
মেঘ ঢাকা অরন্য অগ্নি শিখা জ্বেলে
রুদ্র পলাশের বর্ণীল ছটায়
ভালবাসার পাপড়ি মেলে দেয়
তবু আমি বুনোতে হারাই
মৌসুমি শীতল বেলায় ।
বুনো আমায় উতপ্ত করে
আমি মনে মনে উত্তাপ নেই ।
এক প্রহর , দ্বি প্রহর অগণন তিথিতে ।
চোখের জ্বলে ভরে ওঠে মনের
শীতল, আদ্র, দুর্মোর প্রাসাদ ।
জানালের শার্সিতে বুনোর প্রলেপ ।
নিশুতি রাতের স্বপ্ন দেখি, বুনোর অবগাহনে ।
যেন জলোচ্ছ্বাসের প্রপাতে ডুবতে
জীবনে ডেকে এনেছি বুনো কে ।
বুনো দৃষ্টি নন্দন কাঞ্চনের মতো
গন্ধ হীন গন্ধ বিহীন ।
শেফালির মতো ক্ষণস্থায়ী
দুষ্প্রাপ্য মাধবীর মতো ।
বুনো কে নীলাভ করে নিই
মনের নীল মনিলতায়
যেখানে বুনো আর নিলের ছড়াছড়ি
তাই ভালো লাগে গবাদি পশুর ফেরার লগ্ন ।
বুনোর জীবনে আমি অপ্সরী উর্বশী নয় ।
শ্রাবননামা অঝরে কেঁদে যায় ।
বুনো নিষ্প্রভ, অনুজ্জল, নিস্প্রান ।
প্রতিদিন নিয়ম ভাঙার নিয়মে তাই
প্রত্নদিনের আশায় নামে শুভঙ্করের ফাঁকি ।
বুকের নদীটি ক্রমশ শুকিয়ে আসে ।
আমার বিস্ময়কর ধ্যান ভঙ্গ হয়না ।
নির্জলা অন্ধকারে আমি অভ্যস্ত হতে পারিনা ।
জীবন যেন আটারতে আটকে আছে ।
সদ্য কিশোরের রোয়া ওঠা গোঁফে ।
কিশোরীর বারন্ত যৌবনের অনুজ্জ্বল বুকে ।
বুনো প্রতিবিম্ব হয়ে ওঠে
পড়ন্ত সোনালি কৈশোরে ........
তপ্ত আমি শরীর ভেজায়, বরফ ঠাণ্ডা জলে ।
বুনো এসো, দুর্গতিনাশিনীর মতো
দুব্বা ধানে আর বেগুন ফুলে
তোমায় বরন করে নেবো
সোনালি উৎসবে !
এসে দেখে যাও সমসন্ন অবসরে
কেমন করে নামে আমার হৃদয়ে
তোমারি জন্যে কাঙ্গালী রোদন !!!

