আমি তো সেই মেয়ে
মমতা পাল
আমি তো এমন এক মেয়ে
যার জন্মে কেউ শাঁখ বাজায়নি
উলু দেয়নি কিংবা মঙ্গল ধ্বনি ও।
আমার ছোট্ট তুলতুলে সোনা গালে
কেউ চুমু দেয়নি, কচি কচি হাত দুটো
কেউ সোহাগে জড়িয়ে ও ধরেনি
বরং ঠাকুরমা আঁতুর ঘরে লাথি মেরেছে।
মা কেঁদেছে অবিরত,তার বুকের হৃদস্পন্দনটা যেন ক্ষণিকের জন্য থেমে গেছে।
অনেক কাঁদার পর যখন অামার গলাটা
শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে,
তখন হয়তো বা মা বিরক্তি ভরে একটু দুধ
দিয়েছে খেতে।
আমার মুখের দিকে হয়তো বা ভালো করে তাকায়ওনি সে,
অবজ্ঞা আর বিরক্তিতে ভ্রুটা কুঞ্চিত হয়েছে বারংবার।
আমি পেটে থাকতে নাকি সব লক্ষন ছিল ছেলের
মা কাজের ফাঁকে ও আনন্দে থাকত মুখর,কেমন যেন হাসি হাসি ভাব,মুখটা পরিতৃপ্তির।
তবে কেন যে মেয়ে হলাম অামি!
হয়তো আমার অভিশাপ ছিল কিংবা অন্য কিছু।
একদিন অাগে পাশের বাড়ির এক মাসির
একটা ছেলে হয়েছিল।
সবাই চেয়েছিল তার সাথে আমায় বদল করতে কিন্তু তারা অনেক গরীবতো তাই সেটা আর হয়ে ওঠেনি।
আর মাও সেদিন হয়তো বা তেমন করে চায়নি।
হাজার হোক সন্তান তো।
চোখের সামনে না খেয়ে থাকা সেটা সহ্য করা বড্ড বেশি কষ্টের।
হয়তো বা সামান্য মায়া ও লেগেছিল।
ছেলেবেলায় মায়ের সাথে কোথাও গেলে
সবাই বলতো, 'খুকি এই কালা মেয়েটা কি তোর'?
আহারে বিয়ে দিবি কিভাবে?
মা কিছুই বলতোনা কিন্তু ভিতরে ভিতরে
অনেক কষ্ট পেত,
রাগ হতো অামার উপর অনেক খানি।
চড় মারতো অামার মুখে,
বলতো তুই অন্য কোথাও জন্মাতে পারিসনি?
কেন আমাকে জ্বালাতে এসেছিস?
তোর জন্য আমিতো মুখ দেখাতে পারিনা।
অামার ছোট্ট বুকটা ভেঙে খান খান হয়ে যেত।
ঠাকুর ঘরে গিয়ে ঠাকুরকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদতাম অামি।
বলতাম ঠাকুর, আমাকে এমন কোন গুণ দাও যাতে সবাই অনেক ভালোবাসে।
মায়ের হাতের কাজগুলো সব করতাম অামি যাতে মা খুশি হয়।
মা খুশি হত কিনা জানিনা তবে মুচকি হেসে দিয়ে বলতো, বুড়ি তো পাক্কা গিন্নি হয়ে উঠেছে।
ঐটুকুই আমার সান্ত্বনা ছিল।
যখন অামি ফাইভে বৃত্তি পেলাম তখন ঠাকুরমা বেঁচে অাছে।
সবাইকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলেছিল,
'দেখেছিস অামাদের কালা মেয়েটার লেখাপড়ার কত্ত ধার'!
সেদিন মা অামাকে জড়িয়ে ধরে
অনেক কেঁদেছিল।
সেদিন অামার চোখ দুটোতে যেন কি হয়েছিল
কিছুতেই কান্না সংবরন করতে পারিনি।
তারপর এইট,ম্যাট্রিক আই,এ, তে যখন বৃত্তি পেলাম
তখন সবাই মাকে বলল,' তোর কালা মেয়েটাকে বিয়ে দিতে আর কষ্ট হবেনারে'।
ততদিনে গায়ের রং টা উবে গেছে,চেহারায় এসেছে অনেক পরিবর্তন।
এখন আমি চাকরি করি, বিয়ে হয়েছে যৌতুক বিহীন।
একদিন যে মেয়েটার জন্য মা আত্মগ্লানিতে ভুগতো আজ তাকেই সে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসে।
অন্য ছেলে মেয়েরা তারা তেমন কেউ খোঁজ নেয় না তার।
এখন তার কষ্টটাই আমি সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারি আর সেও আমার