ADS

সিঙ্গাপুরে দীপ্ত দাশের জন্য আমরা গর্বিত


সিঙ্গাপুরে দীপ্ত দাশের জন্য আমরা গর্বিত

গত দুইদিন যাবত সিঙ্গাপুরে আলোচিত নাম আমাদের বাংলাদেশী দীপ্ত দাশ। তার এই ভালো কাজের জন্য আমরা প্রবাসী বাংলাদেশীরা সবাই গর্বিত। কারন প্রবাসে একজন ভালো কাজ করলে তার কাজের জন্য পুরো দেশের সুনাম বয়ে আনে। 


সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ভিডিও ভাইরাল হবার পর আমরা চেষ্টা করি দীপ্ত দাশের সাথে যোগাযোগ করার। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো তাকে লাইভে এনে তার মুখে উদ্ধার কাজের বর্ননা শুনবো। 


আমাদের চেষ্টা বৃথা যায়নি৷ একদিনের মধ্যেই তার সাথে আমরা যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। আমি কল দিয়ে আমার পরিচয় দেবার পর সে খুবই আনন্দিত হয়৷ আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করে৷ কিন্তু আমরা ডরমিটরি থেকে বাহিরে যাবার নিয়ম নেই এমনকি সেও বের হতে পারে না৷ তাই দুজনেরই মন খারাপ হলো। 


অবশেষে তাকে প্রস্তাব করলাম সিঙ্গাপুরে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশী ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভে আসার৷ আমার প্রস্তাবে সে আনন্দিত হয়ে বলে, ভাই আপনার পেইজে লাইভে যাওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের। কিন্তু কিভাবে লাইভে যেতে হয় আমি তা জানি না। 

আমি তাকে প্রস্তাব করলাম, ভাই আপনাকে লিংক পাঠাই যদি সম্ভব হয় তাহলে লাইভে আসবেন। সম্ভব না হলে সমস্যা নেই৷ 


এরপর গত দুইদিন দীপ্ত দাশকে লাইভে আনার চেষ্টা করি। কিন্তু এই ব্যাপারে তার আইডিয়া না থাকায় লাইভে আসা সম্ভব হয়নি৷ 


এক পর্যায়ে গতকাল দীপ্ত দাশের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলি৷ কথায় কথায় জানতে পারি৷ তার বাবার নাম তারাপদ কুমার দাশ৷ বাবা পেশায় কৃষক ছিলেন৷ বয়সজনিত কারনে আপাতত কিছু করেন না৷ তারা ৫ ভাই৷ সবাই প্রবাসে থাকেন। 


দীপ্ত দাশ সিঙ্গাপুরে এসেছে ৮ বছর হলো। সিঙ্গাপুরে তিনি গাছ কাটার কাজ করেন। এখনো বিয়ে করেননি৷ 


সেদিন যা ঘটেছিলো, দীপ্ত দাশ কাজের সাইটে কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷ ঠিক সে সময় একজন আন্টি এসে তাকে বলল,একটা ছেলে জানালার পাশে আটকে আছে৷ তুমি কি তাকে উদ্ধার করতে পারবে! দীপ্ত দাশ তখন বলল,ঠিক আছে আমি দেখে আসি। তখন দীপ্ত দাশ জানালার পাশে গিয়ে দেখে শিশুটি যেখানে আটকে আছে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা অসম্ভব কিছু নয়। তাছাড়া তার মনে একটা কথাই মনে হলো, যে করেই হোক তাকে উদ্ধার করতেই হবে৷ 


সে বুম লিফট এর কাছে এসে মেশিন অন করে শিশুটিকে উদ্ধারের কাজে নেমে পড়ে। তখন তাকে নিচ থেকে একজন ইন্ডিয়ান সহকর্মী সহযোগীতা করে৷ 


শিশুকে উদ্ধার করার সময় তার একটা কথাই মাথায় ছিলো যে করেই হোক তাকে উদ্ধার করবো। তার চেষ্টা বিফল যায়নি। অবশেষে শিশুটিকে উদ্ধার করে সবার নিকট নায়ক হয়ে উঠেন৷ তাকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের সমস্ত পত্রিকায় নিউজ হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার উদ্ধারের দৃশ্য ভাইরাল হয়। সিঙ্গাপুর সিভিল ডিফেন্স ফোর্স থেকে তাকে পুরস্কৃত করা হয়৷ 


ছিলেন একজন সাধারণ শ্রমিক সেখান হঠাৎ নায়কে পরিনত হওয়া দীপ্ত দাশ বিনয়ীভাবে বলেন, আসলে আমি নায়ক নই। আমার অবস্থান থেকে চেষ্টা করেছি একটা জীবন বাঁচানোর। আর এতে আমি সফল হয়েছি। 


আমি তাকে প্রশ্ন করি আপনাকে নিয়ে সব পত্রিকাগুলো নিউজ করলো। প্রবাসীরা বাংলাদেশীরা আপনার বীরোচিত কাজের জন্য প্রশংসা করছে। এমনকি ফেসবুকে আপনাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছে। এতে আপনার অনুভূতি কি? দীপ্ত সুন্দর হাসি দিয়ে বলেন, ভাই আমি সবার নিকট কৃতজ্ঞ। আর আমার এই কাজের জন্য বাংলাদেশের সুনাম হয়েছে সত্যিই এতে আমি খুব গর্বিত। 


আমার দেশকে আমি খুব ভালোবাসি। যতদিন প্রবাসে থাকবো চেষ্টা করবো দেশের সুনাম রক্ষা করার। 


দীপ্ত দাশ একসময় বলেন,আমার কোম্পানি আমাকে অনেক সহযোগিতা করে। আমি এই কোম্পানিতে কাজ করতে পেরে আনন্দিত। 


SCDF থেকে পুরস্কার পাবার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার কোম্পানি Yong aik  এর বস মিস্টার তো (Toh) আমার পরিবারকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমরা চার ভাই এই কোম্পানিতে কাজ করি৷ এই কোম্পানির প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। এই পুরস্কারটি কোম্পানির বস মিস্টার তো সাহেবকে উৎসর্গ করলাম৷ 


অবশেষে দীপ্ত দাশকে ধন্যবাদ দিয়ে কথোপকথন শেষ করি৷ আমি সকল প্রবাসীদের পক্ষ থেকে দীপ্ত দাশকে আবারো অভিনন্দন জানাই। 


দীপ্ত দাশের মতো ভালো মানুষগুলো আমাদের মাঝে হাজারো বছর বেঁচে থাকুক৷ তার মতো আরো শতশত দীপ্ত দাশ দেশের সুনাম বয়ে আনুক।


ওমর ফারুকী শিপন। 

সিঙ্গাপুর প্রবাসী৷

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.