ADS

বিমূর্ত


বিমূর্ত প্রতিশোধ 

পর্ব

তারানা মরিয়ম খান (রিনি) 


আজ আমার বাসর রাত।সেই এগারটা থেকে  একটা পর্যন্ত বসে আছি বরের  আশায়। কিন্তু সাহেবের দেখার কোন নাম গন্ধই নেই।ভেবে ছিলাম বউ সেজে বসে থাকবো।তিনি এসে ঘোমটা খুলে আমায় দেখবেন।আমি সালাম করব,তিনি বাসর রাতের গিফট দিবেন।তারপর দুজন মিলে ওযু করে নামাজ পড়বো।পরে গল্প গুজব কিংবা উনি যা করতে ইচ্ছুক তা করেই কাটিয়ে দিব রাতটা।এমনইতো হয় শুনেছিলাম এবং হয়েও থাকে।কিন্তু উনিতো এখন পর্যন্ত ঘরেই আসলেন না।আচ্ছা,উনি আসতে আসতে না হয় আমার পরিচয়টা দিয়ে ফেলি।


আমি তাহিয়া তাবাসসুম।অনার্স শেষ করেছি নরসিংদী  সরকারি  কলেজ থেকে।তিন বোনের মধ্যে আমিই বড়।বাবা বেসরকারি  হাই স্কুলের গণিত  টিচার।গণিতের শিক্ষক হিসেবে বাবার অনেক নাম ডাক।তাই স্কুলে পাঠদানের পাশা পাশি বাবা অনেক প্রাইভেটও পড়ান।তাতে আমাদের পরিবার খুব স্বচ্ছলভাবেই চলছে।কিন্তু আমাদের বাবা অত্যন্ত রাগী  মানুষ। মাঝেমধ্যে  মনে হয় তিনি বাবা নন,মনে হয় যেনো বাঘের থাবা।আমরা চার মা মেয়ে যেনো তারের মত,না না ইস্পাতের  মতো  সোজা  থাকি সবসময়ই। বাবার ভয়েইতো এখন পর্যন্ত কোন ছেলের দিকে ভালো করে তাকাইনি। এত্তো  এত্তো  প্রেমের  অফার আসা সত্বেও প্রেমে জড়াইনি।ভালোবাসার  ভাও বুঝিনি।এতে অবশ্য লাভ ছাড়া ক্ষতি হয়নি।বাবা আমাকে দেখে শুনে অনেক বেছে বেছে অনেক ভালো ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে দিয়েছেন।শুনেছি ওনাদের পরিবার নাকি অনেক আগে থেকেই হাই এডুকেটেড।আত্নীয়স্বজনগুলো নাকি দেশের বড় বড় পোষ্টগুলো দখল করে আছে।


ছ’ মিনিটের মত লাগবে।আমার ওনার পরিচয়টাও দিয়ে ফেলি,যার জন্য চব্বিশ বছর ধরে আমার ভালোবাসাটুকু তিল তিল করে জমিয়ে রেখেছি।আমার স্বামীর  নাম সিয়াম মাহমুদ খান।যাকে না দেখেই আমি আমার ভালোবাসাটুকু  সঞ্চয়  করে রেখেছি আজকের জন্য।তিন ভাই বোনের মধ্যে সিয়ামই ছোট।দেখাশোনায় যতেষ্ট স্মার্ট।শুধু স্মার্ট বললে ভুল হবে,ওভার স্মার্ট।আমি সামনা সামনি না দেখলেও  আমার বড় জা’য়ের মোবাইলে  ছবি দেখেছি।ঢা বি থেকে এম বি এ করার পর নিজেই প্রডাকশন  হাউজ খুলেছে এবং নিজেই সেটার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। 


বিয়ে করতে নাকি তিনি মোটেও আগ্রহী ছিলেন না।শুধুমাত্র আমার জা মানে ওনার লীনা ভাবীর একান্ত ইচ্ছায় তিনি বিয়ের পিড়িতে বসতে রাজি হন।আমার জা’ও অনেক স্মার্ট সুন্দরী  মহিলা।আর দুজন সদস্য!!!আমি ওদের না চিনলেও পরিচয় দিতে পারবো।আমার ভাসুর সাঈম মাহমুদ খান(সফট ওয়ার ইঞ্জিনিয়ার), আর তাদের সবার বড় বোন সায়মা মাহমুদ খান।যিনি ঢাকায় একটি গভঃ মেন্ট হাই স্কুল টিচার।আমার বিয়েতে উনারা কেউ আসেন নি জরুরী  কাজ থাকায়।এক রকম ঘরোয়া  পরিবেশেই আমাদের বিয়েটা হয়।বিয়েতে আমার বর,তার ভাবি  ও চার পাচজন বন্ধু উপস্থিত ছিলেন।বাবা চেয়েছিলেন বড় করে অনুষ্ঠান করতে।কিন্তু উনারা আপাতত আকদ ও পরে বিশাল আয়োজন  করে অনুষ্ঠান করবেন বলে বাবা অমত করেন নি।



উফ!!!আর পারছিনা! বসে থাকতে থাকতে ঘাড়ে  ব্যাথা করছে।তিনটার উপর বাজে।আমি বিছানায় একটু কাত হলাম।কখন যে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম টেরই  পেলাম না।ঘুম ভাংলো আমার জা’য়ের ডাকে।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি নয়টা বেজে বিশ মিনিট। উনি আমাকে খেতে ডাকতেই  আমি আমার বরের কথা জিজ্ঞেস  করলাম।তিনি বললেন উনি নাকি নয়টাই অফিসে চলে গেছে।আমি আবার কিছু জিজ্ঞেস  করার আগেই তিনি বলতে লাগলেন, আমার দেবরটা না অ- নে- ক লাজুক এবং ভীতু  টাইপের।সে খুব কমই মেয়েদের সাথে মেলামেশা করেছে।আমি কিছুটা চিন্তিত  হতেই তিনি আমায় আস্বস্ত  করলেন,চিন্তার কোন কারণ নেই।দুদিন বাদে সব ঠিক হয়ে যাবে।


ব্রেকফাস্ট  শেষে  আমি পুরো  বাড়িটাই  ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।বাড়িটি নাকি আমার শশুরের তৈরি।আমি অবাকের শীর্ষে!এত্তো  আগে তিনি কিভাবে অমন আধুনিক বাড়ি  বানালেন। অবশ্য তিনিও নাকি বড় মাপের ইঞ্জিনিয়ার  ছিলেন।ডুপ্লেক্স  বাড়িটার  প্রতিটা কোনায় কোনায় যেন আধুনিকতার  ছোয়া।


আজ এই প্রথম আমি আমার বাবার উপর অনেক খুশি।কারণ তিনি আমাকে এমন একটা পরিবার দেখে বিয়ে দিলেন।বাড়িটায় ঘুরতে  ঘুরতে  আমার জ’য়ের রুমে গেলাম।রুমটা এতটাই পরিপাটি  যে আমার কাছে মনে হল ওটা ব্যাবহারের জন্য নয়।মনে হল কোন এক্সিবিশন এর জন্য রাখা।দেয়ালে আমার ভাসুর ও জা’য়ের ছবি টানানো।তাদের দেখে মনে হল যেন পৃথিবীর সেরা দম্পতিদের মধ্যে সেরা।


আজও  উনার অপেক্ষায় বসে আছি।উনি সোফায় বসে লেপটপ গুতো গুতি করছেন।আমি অনেক্ষন যাবত উনাকে  তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম।উনাকে  দেখে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেলো।আমার বুকের মধে ধুক ধুক করতে লাগলো।ইচ্ছে করছে জড়িয়ে ধরে এলোপাথারি কয়েকটা চুমু  খেয়ে নিই আমার লাড্ডুটারে।কিন্তু তিনি একবারের জন্যও  আমার দিকে তাকান নি।আমি লজ্জায় কিছু বলতেও  পারছিনা।আরো কিছুক্ষণ  তাকিয়ে থেকে চুপ চাপ শুয়ে পরলাম।


এভাবেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।তিনি আমার কাছে আসেন না আর আমিও  উনাকে লজ্জায় কিছু বলতে পারছিনা।আমিতো  এখন বিবাহিত। তাই স্বাভাবিকভাবেই  স্বামীর  আদর, ভালোবাসা পাওয়ার জন্য  মনটা আনচান করে।কিন্তু তিনি তো আমার দিকে ফিরেও তাকান না।এভাবে প্রায়  সতেরো,আঠারো  দিন চলে গেলো।তাই একদিন সমস্ত ভয়,লজ্জা এক পাশে ফেলে সাহস করে জিজ্ঞেস  করেই ফেললাম—আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়নি??এই এতো  দিনের  মধ্যে একদিনও যে আমার কাছে আসেন নি!!তিনি কোন জবাব তো দেননি বরং চরম বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন।


চলবে…..

সংগৃহীত: https://kobitor.com/bimurto1/

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.